ঢাকা খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
ফিচার

হাওরে কান্দা কাটায় গোখাদ্য ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস

বিশেষ প্রতিনিধি ২২ মার্চ ২০২৫ ০৫:০০ পি.এম

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলাসহ জেলার সবকটি  হাওরে অপরিকল্পিত ভাবে পতিত কান্দা কাটার (গর্তের) মহোৎসব যেন থামছে না । ফসল রক্ষা বাঁধের নাম করে  কিংবা ব্যক্তি পর্যায়েও  চলছে হাওরের পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড। কান্দা কাটার মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে সাময়িক ফসল রক্ষা হলেও এই প্রক্রিয়ায় গোটা হাওরাঞ্চলকে বিপন্নের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, বলছেন

হাওরপাড়ের কৃষক ও  সচেতন মানুষেরা।

সরকার কর্তৃক  অপরিকল্পিত মাটির প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি ব্যক্তি স্বার্থেও তছনছ করা হচ্ছে হাওরের বিস্তীর্ণ সবুজ ঘাসে ডাকা   কান্দাগুলো। এতে অস্তিত্ব সঙ্কট দেখা দিয়েছে হাওরের। অবাধে কান্দা কাটার এই প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে না পারলে বহুবিধ সমস্যার সম্মুখীন হবে হাওর। এ নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কৃষকেরা ।

উপজেলার যে সব  হাওরে  ফসল রক্ষা বাঁধ নেই সেখানে ও মাটি কাটার ধ্বংসস্তুপ থেকে রেহাই পাচ্ছে না  কান্দাগুলো। হাওরাঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এসব কান্দা কেটে অবাধে মাটি বিক্রি করছে ট্রলি চালকেরা। মাটি কাটতে কেউ বাঁধা দিলে তার উপর চড়াও হয় ট্রলি ও চালক চক্র। এদের সাথে স্থানীয় প্রভাবশালীরাও জড়িত। ব্যক্তি স্বার্থ এবং সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে হাওরের প্রাণ-প্রকৃতি বিলীন হলেও দেখার যেন কেউ নেই।  প্রতি বছর কান্দা কাটার ফলে হিজল-করচ, নলখাগড়া ও ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ উর্বর কান্দা যেন ডোবা-নালায় রূপ নিয়েছে। অতীতের বিস্তীর্ণ গোচারণ ভূমি, এখন যেন গর্তে পরিপূর্ণ।  হাওর বিধ্বংসী ভেকু মেশিনের  দিয়ে ছিন্নভিন্ন করা হচ্ছে কৃষকের ধান মাড়াই, খড় শুকানো ও গবাদি পশু চড়ানোর শেষ ভরসাটুকু। ভাটির উপজেলা শাল্লার নদীবেষ্টিত হাওরের যেসব স্থানে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে সেইসব জায়গার অধিকাংশই প্রায় কান্দাশূন্য হয়ে পড়েছে।  

ভান্ডাবিল হাওরের বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, শিবপুর গ্রামের পূর্বদিকের বিশাল কান্দা শ্রীহীন হয়ে গেছে অপরিকল্পিত গর্তে। 

অপরদিকে,  বড় হাওর ছায়ার  অংশের কর্তিকপুর থেকে শ্রীহাইল গ্রাম 

পর্যন্ত হাওরের অনেক কান্দাই আর কান্দা নেই । হাওরের গোপে-গেফে অল্পবিস্তর যা আছে তাও প্রায় ধ্বংসের পথে। বাঁধ মেরামতের নামে প্রতি বছর হিজল-করচের গোড়ার অংশ ও ঝোপঝাড় কেটে যেভাবে মাটি নেওয়া হচ্ছে, তাতে অবশিষ্ট কান্দাও বিলীন হওয়ার পথে। এতে হাওরের নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য চরম হুমকিতে রয়েছে ।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাওর বুকে পতিত উঁচু সমতল ভূমিকে কান্দা বলা হয়। প্রকৃতিগতভাবেই এগুলোর সৃষ্টি হয়েছে। ধানি জমির পাহারাদার হিসেবে জেগে থাকে শত বছরের পুরোনো ওই কান্দা। কৃষকের জীবন-জীবিকার সাথে ওতোপ্রোতভাবে মিশে আছে হাওর পারের পতিত এ গোচারণ ভূমি। যেখানে অযত্নে বেড়ে ওঠে হিজল, করচ, বরুণ, নলখাগড়া, ঢোলকলমি, চাইল্লাবন, বল্লুয়া, বেত, বনতুলসী, বন গোলাপের ঝোপঝাড়সহ গুল্মজাতীয় হরেক প্রজাতির উদ্ভিদ। হাওরের ওই গাছ-গাছড়ায় দেশীয় পাখি, সাপ, গিরগিটি, মেছোবাঘ, শিয়াল, বেজি, বন বিড়ালসহ নানা জাতের বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল। বর্ষা মৌসুমে এসব তলিয়ে গেলে দেশীয় প্রজাতির মাছের অভয়ারণ্যে হিসাবে পরিচিত।   

উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের  আনন্দপুর গ্রামের  সবজি চাষী বিকাশ চক্রবর্তী বলেন, কান্দার দিকে থাকালে খুব কষ্টলাগে। যে কান্দায় ছোট বেলায় গরু চড়াতাম এখন এসব বিলিন হচ্ছে চোখের সামনে। বাঁধের নাম করে এসব কান্দায় গর্ত তৈরি করে গোখাদ্যের বারোটা বাজিয়ে দিল।

আটগাঁও ইউনিয়নের মামুদ নগর গ্রামের বড় কৃষক হাবিবুর রহমান হবিব বলেন, হাওরে অপরিকল্পিত  কান্দা কাটার ফলে পরিবেশ বিপর্যয় সহ গোখাদ্য ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।  বছর বছর কান্দা কাটার কারণে  গরু-বাছুরের ঘাস খাওয়ার জায়গা বিলীন হচ্ছে। ফসল তোলার মৌসুমে ধান-খড় মাড়াই ও শুকানোর জায়গাও ফুরিয়ে যাচ্ছে। কান্দা কাটায় হাওরের গাছ-গাছালি ও জীবজন্তুর উপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি আরও বলেন, হাওরের এই ক্ষতি কোন কিছুর বিনিময়ে পোষানো সম্ভব নয়। যদিও ফসল রক্ষায় বাঁধের প্রয়োজন। তবে যে করেই হোক ফসল ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সুপরিকল্পিতভাবে হাওরের উন্নয়ন করা জরুরি ।


পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, বাঁধ রক্ষায় যে কান্দাগুলো কাটা হচ্ছে সেগুলো হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে থাকে। এভাবে কান্দা কেটে বাঁধ নির্মাণ মানে হাওরের অপমৃত্যু ঘটানোর সামিল। এর মাধ্যমে হাওরে দীর্ঘ ক্ষতের সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাই কান্দা ধ্বংস না করে বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে বিকল্প পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বললেন, হাওরের প্রকৃতি ও পরিবেশ ঠিক রেখে বাঁধের ব্যাপারে ইতিমধ্যে কিছু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সিসি ব্লক দিয়ে বাঁধ ঢেকে আরমানিং করে স্থায়ী বাঁধ করা হচ্ছে। বন্যা পুনর্বাসন জরুরী সহায়তা প্রকল্পের আওতায় এই কাজ চলমান আছে। ধীরে ধীরে এর প্রসার আরও বাড়ানো হবে।

আরও খবর

news image

আম ব্যবসায় সাফল্য: বড় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন সোহাগের 

news image

তামাকমুক্ত দেশ গড়তে সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণ প্রয়োজন

news image

সৌখিন কৃষি ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানবিক সেবা কাজে কুসুমপুর গ্রামবাসীর ভালোবাসায় শিক্ত ভেষজ বিজ্ঞানী বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ টিপু সুলতান পিএইচডি 

news image

প্রযুক্তিগত সুফল কৃষিতে জাগরণ সৃষ্টি করেছে

news image

পথে প্রান্তরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে জারুল ফুল

news image

হাওরে কান্দা কাটায় গোখাদ্য ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস

news image

দক্ষিনাঞ্চল থেকে হাড়িয়ে যাচ্ছে ফুটপাতে চুলকাটার ঐতিহ্য

news image

জোসেফ মাহতাবের এক বহুমুখী সমাজ সংস্কারকের অন্যতম গল্প

news image

শেরপুরের মাটি সূর্যমুখী চাষে বেশ উপযোগী

news image

আমতলীতে আমের মুকুলের মৌমৌ গন্ধে দল বেঁধে মধু আহরনে ছুটছে মৌমাছি

news image

আমতলী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বেত ও বেতফল

news image

ভবেন্দ্র মোহন সাহা থেকে ভবা পাগলা হয়ে উঠার গল্প

news image

দক্ষিনাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গানের পাখি দোয়েল