ঢাকা খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
ফিচার

ভবেন্দ্র মোহন সাহা থেকে ভবা পাগলা হয়ে উঠার গল্প

ফিচার: ২১ ডিসেম্বার ২০২৪ ০৩:০০ পি.এম

ঢাকা জেলার ধামরাই থানার আমতা গ্রামে পিতা গজেন্দ্র কুমার সাহা এবং মাতা গয়া সুন্দরী দেবীর তিন পুত্র এক কণ্যা সন্তানের মধ্যে ভবেন্দ্র মোহন সাহা ছিলেন যমজ সন্তান। অপর যমজের নাম হলো- দেবেন্দ্র। আনুমানিক ১৩০৭ বাংলা সালের ৩১ আশ্বিন মোতাবেক -১৮৯৭ খৃষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে ভবেন্দ্র মোহন সাহা প্রকাশিত ভবা পাগলা জন্ম গ্রহণ করেন

একজন মরমী ভাবনারকালী সাধককবি হিসেবে ভবা পাগলা বিখ্যাত হয়ে আছেন। উভয় বাংলায় তাঁর বিপুল সংখ্যক ভক্ত অনুরাগি রয়েছেন। তাঁর লেখা অনেকগুলো জনপ্রিয় গান স্বকীয় বৈশিষ্ট নিজস্ব স্টাইলে সমুজ্জল

অল্প বয়সে পিতার মৃত্যু হলে বড় ভাইয়ের ব্যবসার সুবাধে কলকাতা চলে যান। সেখানে তাঁকে স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হয়। কিন্তু সেদিকে তাঁর মনোযোগ নেই। তিনি গান রচনা এবং গাওয়াতেই অধিক উৎসাহী, তাই লেখাপড়া বেশীদুর যায়নি

ফিরে আসেন নিজ গ্রাম ধামরাইয়ের আমতায়। লোকশ্রুতি থেকে জানা যায়, মায়ের আদেশে  ত্রিশ বছর বয়সে বিয়ে করেন ভবা পাগলা। দুই ছেলে এক মেয়ের পিতা ছিলেন তিনি

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগ হলে তিনি স্থায়ীভাবে কলকাতা চলে যান। প্রথমে স্ত্রী, পুত্র-কন্যাদের পাঠিয়ে দেন, এবং মাস খানেক পরে নিজেও কলকাতা চলে যান। প্রথমে শোভা বাজারে এক ভক্তের বাড়িতে কিছুদিন অবস্থান করেন। এর কিছুদিন পর পুর্ব বর্ধমান জেলার কালনায় চলে যান

সেখানেই আমৃত্যু অবস্থান করেন। তিনি মা কালির ভক্ত হিসেবে অনেক গুলো কালী মন্দির প্রতিষ্টা করেন মন্দির প্রতিষ্টা করেই শেষ নয়, কালি মন্দিরের সেবক হিসেবেই জীবন অতিবাহিত করেন। সেই সাথে লেখেন অসংখ্য গান, যার অধিকাংশইকালী দেবী উদ্দেশে নিবেদিত

জনশ্রুতি হলো প্রায় ছিয়াশি হাজার গান লেখে গেছেন তিনি !! গবেষকদের মতে তাঁর লেখা গানের সংখ্যা দশ হাজারের মতো হবে

জানা যায় ১৯৫১ ইংরেজি সালে পশ্চিম বাংলার পুর্ব বর্ধমান জেলার কালনা শহরে অবস্থিত জাপট এলাকায় একটি মন্দির প্রতিষ্টা করেন, যাভবা ভবানী মন্দিরহিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ভবা পাগলার অনেকগুলো গানই মন্দিরে বসে রচনা করেন

বাংলা বর্ষপঞ্জীর প্রথম মাস বৈশাখের শেষ শনিবার ভবা পাগলা প্রতিষ্টিত ভবানী মন্দিরে এক বিশেষ উৎসব চালু করেন সেই মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই উৎসব আজো চালু রয়েছে। দেশ বিদেশের অগনিত সংখ্যক লোক সমাগম হয় সে সময়। সময় ভক্তবৃন্দ এবং তাঁর অনুগামী অনুসারীগন ভবা পাগলার বানী, জীবন দর্শন এবং গানে গানে মূখরিত করে তোলেন জাপট এলাকার আকাশ বাতাস। তাঁদের মূখে
শোনা তাঁর লেখা কিছু বিখ্যাত জনপ্রিয় গানের প্রথম কলি:

১। এসেছি হেথায়, তোমারি আজ্ঞায়
আদেশ করিবা মাত্র যাবো চলিয়া,
পরমে পরম জানিয়া

২। নদী ভরা ঢেউ, বুঝোনা তো কেউ
কেন নিজে তরী বাও বাও বাওরে

৩। আমার নিতাই চান্দের বাজারে
একমন যার সেই যেতে পারে

৪। শ্যামের বাঁশী শুনে বনে বনে ময়ূর নাচেরে
এখনো সেই বৃন্দাবনে, বাঁশী বাজেরে

৫। গুরু আমায় কর করুনা ()
ঝড় তুফানে বেয়ে যাবো গুরু
তোমার দেয়া তরী খানা

৬।যদি মনকে সাধু করতে পারো,
ধরো সাধুর বেশ।
কিংবা-
আমি মানুষ ভালবাসি
কোন তীর্থের নাই প্রয়োজন,
গয়া, গঙ্গা, কাশী
আমি মানুষ ভালবাসি
মৃত্যু: ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম বাংলার বর্ধমান(পুর্ব) জেলার কালনায় দেহত্যাগ করেন এই সাধকমৃত্যু কালে তার বয়স ছিলো ৮৭ বছর।

 

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

আম ব্যবসায় সাফল্য: বড় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন সোহাগের 

news image

তামাকমুক্ত দেশ গড়তে সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণ প্রয়োজন

news image

সৌখিন কৃষি ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানবিক সেবা কাজে কুসুমপুর গ্রামবাসীর ভালোবাসায় শিক্ত ভেষজ বিজ্ঞানী বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ টিপু সুলতান পিএইচডি 

news image

প্রযুক্তিগত সুফল কৃষিতে জাগরণ সৃষ্টি করেছে

news image

পথে প্রান্তরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে জারুল ফুল

news image

হাওরে কান্দা কাটায় গোখাদ্য ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস

news image

দক্ষিনাঞ্চল থেকে হাড়িয়ে যাচ্ছে ফুটপাতে চুলকাটার ঐতিহ্য

news image

জোসেফ মাহতাবের এক বহুমুখী সমাজ সংস্কারকের অন্যতম গল্প

news image

শেরপুরের মাটি সূর্যমুখী চাষে বেশ উপযোগী

news image

আমতলীতে আমের মুকুলের মৌমৌ গন্ধে দল বেঁধে মধু আহরনে ছুটছে মৌমাছি

news image

আমতলী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বেত ও বেতফল

news image

ভবেন্দ্র মোহন সাহা থেকে ভবা পাগলা হয়ে উঠার গল্প

news image

দক্ষিনাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গানের পাখি দোয়েল